Memories of Ma - written for Alapini Patrika, Santiniketan
বাইশ বছর এক চাকাতেই বাঁধা , রাঁধার পরে খাওয়া, খাওয়ার পরে রাঁধা' - অগুন্তি বার মা-য়ের মুখে এই লাইন টা শুনেছি। সঙ্গে যেন ছোটো একটা প্রায় না শুনতে পাওয়া আক্ষেপের শ্বাস। রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতা মা স্মৃতি থেকে আবৃত্তি করতেন, কিন্তু এটার সঙ্গে ছিল একটা আম্তিক যোগাযোগ।
মা বললেই সাধারনত যে শান্ত,স্নিগ্ধ, সংসারে নিমজ্জিত মূর্তি মনে ভেসে আসে, আমার মা তার থেকে একটু ব্যতিক্রমী চরিত্রের ছিলেন। অনবদ্য রান্নায় সবাইকে মুগ্ধ করে, নিপুন হাতে অতিথি সেবা করে, একটা ঝকঝকে তকতকে বাড়ি সামলে, প্রতিদিন দুপুরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাগজ আর গভীর রাত অবধি বই পড়ায় খুব একটা ফাঁক পড়তে দেখিনি। তাতে হয়ত কখনো সখনো কাজ থাকত পড়ে, হত অনাবশ্যক দেরি, তবু আমাদের কাছে ওটাই মায়ের চেনা জানা ভালবাসার চেহারা |
বহুবার গল্প শুনেছি , ছোটবেলায় মা আমাকে রেখে 'মহিলা সমিতি' তে যেত তাতে আমি আমার আপত্তি প্রকাশ করেই বোধয় সে জায়গার নামকরণ করেছিলাম 'ময়লা সমিতি '! আমাদের চেনা জানা পরিসরে কারো মা -কেই সে সময় তেমন ভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে সভা সমিতি, মিটিং মিছিল এ অংশগ্রহণ করতে দেখিনি, তাতে আমাদের এবং বাবার মনে একটা চাপা গর্বও ছিল| মার হাত ধরেই পরিচয় আশাপুর্নার সত্যবতীর সাথে , তসলিমার 'নির্বাচিত কলাম' এর সাথে | কিশোরী বয়েসে মা এবং মার ভালবাসার চরিত্ররা যে আমাদের দুই বোনের বড়বেলায় কতটা প্রভাব ফেলবে তা তখন বুঝবার মত গভীরতা আসেনি, এখন প্রতি পদেই অনুভব করি |
শান্তিনিকেতনে পাকাপাকি ভাবে বসবাসের সিদ্ধান্তটা মার জীবনে একটা অন্য মাত্র এনে দেয় | ভালবাসার রবীন্দ্রনাথ কে যেন হাতের নাগালে পাওয়া | নাট্যঘরে নাটক , গৌর প্রাঙ্গনে নানা অনুষ্ঠান, বসন্ত উত্সব -এর উচ্ছসিত গল্প আমরা শান্তিনিকেতন গেলেই দুজনের মুখে শুনতাম | মাকে সেসময় প্রচন্ড প্রভাবিত করে শ্রীমতি রানী চন্দের সাহচর্য্য | স্নেহ এবং সেই বিরাট ব্যক্তিত্বের নানা গল্পের ভেতর দিয়ে রানী চন্দ মাকে এক আশ্চর্য মায়ার বন্ধনে বেঁধেছিলেন | ওনার পরমর্শেই মার আলাপিনি মহিলা সমিতিতে যোগদান | চিরকালের রবীন্দ্র অনুরাগী এবং বাংলা সাহিত্যের নিবিষ্ট পাঠিকার কাছে আলাপিনি নতুন এক জানলা খুলে দিল | খুব মনে পড়ে শ্রীমতি অমিতা সেন এর বাড়িতে আলাপিনি মহিলা সমিতির সভা থেকে ফিরে এসে মার উজ্জ্বল মুখ , এমন সব নক্ষত্রদের সান্নিধ্যে এসে জীবন যেন পরিপূর্ণ |
বীজমন্ত্রের মত মা আমাদের কানে নিরন্তর বলতেন 'চরেইবেতি ', যাতে আমরা দুই বোন পায়ের তলায় জমি তৈরী করে নিতে পারি , শুধু সংসারের জালে আটকা না পড়ে যাই | মেয়েদের স্বনির্ভরতা মার জীবনে সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ বিষয় বলা যেতে পারে | ঠিক সেই কারণে , মহিলাদের আত্মপ্রকাশের একটি সুন্দর মাধ্যম বলেই মার মনে 'আলাপিনি মহিলা সমিতি ' এমন একটা জায়গা করে নিয়েছিল | খুবই অসময়ে মার আমাদের ফেলে রেখে চলে যাওয়া , তবু শান্তিনিকেতনের মানুষ এবং আলাপিনির মত সংস্থা মাকে যে নির্মল আনন্দ এবং সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা দিতে পেরেছিল , তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ |
Darun laglo
ReplyDelete